গাড়ি যত দামি হোক না কেন, ভুল ইঞ্জিন অয়েল ব্যবহার করলে এর পারফরম্যান্স ও স্থায়িত্ব দুইই ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ঠিকমতো ইঞ্জিন অয়েল নির্বাচন করা মানে আপনার গাড়ির হার্টকে সুস্থ রাখা। এই গাইডে আপনি জানবেন – কোন ইঞ্জিন অয়েল আপনার গাড়ির জন্য সঠিক, কোন ব্র্যান্ড ভালো এবং কেনার সময় কী কী খেয়াল রাখতে হবে।
❓ ইঞ্জিন অয়েল কী? এটা কেন প্রয়োজন?
ইঞ্জিন অয়েল হচ্ছে তরল পদার্থ যা ইঞ্জিনের ভিতরের পার্টসগুলোকে সঠিকভাবে মুভ করতে সাহায্য করে। এটি মূলত তিনটি কাজ করে:
- ঘর্ষণ কমানো
- ইঞ্জিন ঠান্ডা রাখা
- ইঞ্জিনের ভিতর পরিষ্কার রাখা
ঠিক অয়েল ব্যবহার না করলে ইঞ্জিন ওভারহিট, শব্দ বা স্থায়ী ক্ষতি হতে পারে।
🧪 ইঞ্জিন অয়েলের প্রকারভেদ
ধরন | উপযুক্ত কাদের জন্য | পারফরম্যান্স |
---|---|---|
Mineral Oil | পুরনো গাড়ি, সাধারণ ব্যবহার | গড় |
Semi-Synthetic | মাঝারি বাজেটের গাড়ি | ভালো |
Fully Synthetic | নতুন, হাই-পারফরম্যান্স গাড়ি | সেরা |
🧾 ইঞ্জিন অয়েল কেনার সময় খেয়াল রাখবেন যেসব বিষয়:
- Viscosity Grade (ঘনত্ব):
যেমন: 10W-30, 20W-50 – গাড়ির ম্যানুয়ালে দেখে ঠিক করুন - API বা ACEA সার্টিফিকেশন:
গুণগত মানের নিশ্চয়তা দেয় - ম্যানুফ্যাকচারার রেকমেন্ডেশন:
কোম্পানি যেটা সাজেস্ট করে - আপনার গাড়ির ব্যবহার ও আবহাওয়া:
বেশি হিট হলে ঘন অয়েল, ঠান্ডা অঞ্চলে পাতলা অয়েল উপযুক্ত
🌟 বাংলাদেশের সেরা ইঞ্জিন অয়েল ব্র্যান্ড ও রিভিউ
✅ ১. Mobil (মোবিল)
সবচেয়ে বেশি জনপ্রিয় ব্র্যান্ড। সিনথেটিক ও সেমি-সিনথেটিক দুটোই পাওয়া যায়।
- ভালো দিক: দীর্ঘস্থায়ী, বিশ্বমানের ফর্মুলা
- উপযুক্ত: নতুন গাড়ি ও হাইওয়ে ড্রাইভারদের জন্য
- দাম: ৳৯০০ – ৳২,৫০০
✅ ২. Shell (শেল)
বিশ্ববিখ্যাত ব্র্যান্ড, বাংলাদেশেও সহজলভ্য।
- ভালো দিক: ইঞ্জিন ক্লিন রাখা ও ফুয়েল ইকোনমি বাড়ায়
- উপযুক্ত: যাদের গাড়ি নিয়মিত সিটি ও হাইওয়ে দুই জায়গায় চলে
- দাম: ৳৮৫০ – ৳২,২০০
✅ ৩. Total (টোটাল কোয়ার্টজ)
বিশ্বের অনেক গাড়ি নির্মাতা এই ব্র্যান্ড সাজেস্ট করে।
- ভালো দিক: ভালো কুলিং ও ক্লিনিং পারফরম্যান্স
- উপযুক্ত: যেকোনো প্রাইভেট গাড়ির জন্য
- দাম: ৳৭০০ – ৳২,০০০
✅ ৪. Havoline (হ্যাভোলাইন)
Chevron-এর সাব-ব্র্যান্ড, বাংলাদেশে জনপ্রিয়
- ভালো দিক: ইঞ্জিন সাউন্ড কমায়, স্লাজ তৈরি করে না
- উপযুক্ত: পুরনো গাড়ির জন্য ভালো
- দাম: ৳৬৫০ – ৳১,৮০০
✅ ৫. Castrol (ক্যাস্ট্রল)
দীর্ঘ সময় ধরে ব্যবহারে পারফরম্যান্স ধরে রাখে
- ভালো দিক: ওভারহিট রেজিস্ট্যান্ট
- উপযুক্ত: গরমে বা হেভি ডিউটি ব্যবহারের জন্য
- দাম: ৳৮০০ – ৳২,০০০
🔄 কত কিলোমিটার পরপর ইঞ্জিন অয়েল পরিবর্তন করবেন?
- Mineral Oil: প্রতি ৩,০০০–৫,০০০ কিমি
- Semi-Synthetic: প্রতি ৫,০০০–৭,০০০ কিমি
- Fully Synthetic: প্রতি ৮,০০০–১০,০০০ কিমি
📌 তবে সবসময় গাড়ির ম্যানুয়াল অনুযায়ী ফলো করা উত্তম।
🛒 কোথায় থেকে ইঞ্জিন অয়েল কিনবেন? জাল অয়েল চিনবেন কীভাবে?
কেনার উৎস:
- অথরাইজড শোরুম (যেমন Mobil 1 Center)
- Daraz Mall, Pickaboo
- গাড়ির পার্টস শপ (বিশ্বস্ত দোকান)
জাল অয়েল চেনার উপায়:
- QR/Barcode স্ক্যান করুন
- সিল প্যাক চেক করুন
- খুব সস্তা দাম হলে সাবধান!
- লেবেল ও বানান ভুল থাকলে ফেক হতে পারে
❓ প্রায়শই জিজ্ঞাসিত প্রশ্ন (FAQ)
🔸 কোন ইঞ্জিন অয়েল নতুন গাড়ির জন্য ভালো?
Fully Synthetic অয়েল নতুন গাড়ির জন্য সেরা কারণ এটি দীর্ঘস্থায়ী ও ইঞ্জিনের ক্ষতি কমায়।
🔸 আমি কী Mineral Oil ব্যবহার করতে পারি?
পুরনো গাড়ির জন্য এটি ব্যবহারযোগ্য, তবে নতুন গাড়িতে তা পরামর্শযোগ্য নয়।
🔸 সস্তা অয়েল ব্যবহার করলে কী হবে?
ইঞ্জিনের ঘর্ষণ বাড়বে, গরম হবে ও ক্ষতি দ্রুত হবে। তাই মানসম্পন্ন ব্র্যান্ড বেছে নিন।
🔸 আমার গাড়ি বেশি হিট হয় – কোন গ্রেডের অয়েল নেব?
20W-50 বা গাঢ় Viscosity গ্রেডের অয়েল ব্যবহার করতে পারেন। তবে গাড়ির ম্যানুয়াল ফলো করুন।
🔚 শেষ কথা: কোন অয়েল আপনার জন্য উপযুক্ত?
আপনার গাড়ির মডেল, ব্যবহার ধরন ও বাজেটের উপর ভিত্তি করে অয়েল নির্বাচন করুন। যদি আপনি ফ্রিকোয়েন্টলি লং ড্রাইভে যান বা নতুন গাড়ি চালান, তাহলে Fully Synthetic ব্র্যান্ডের অয়েল (যেমন Mobil, Shell) ব্যবহার করাই বুদ্ধিমানের কাজ।